পৃথিবীর বুকে আমার একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল ‘মা’

3862

সময়ের চিন্তা ডট কম, তুহিনঃ আমার মা জননীর প্রতি রইল আপন অনুভব ও ভালবাসা। সন্তানকে মানুষ করতে একজন মা যেন তার জীবনের পুরোটাই দিয়ে যান আত্মত্যাগের খেরোখাতায়। শত যন্ত্রণা ও বেদনা সহ্য করেও সন্তানের সামনে মলিন হয় না মা জননীর মুখখানি। আজকের এই দিনটি সর্বংসহা সেই মায়ের জন্য।
বিশ্ব মা দিবসে যদিও সন্তানের প্রতি গর্ভধারিণীর ভালবাসার জন্য কোন বিশেষ দিবসের প্রয়োজন হয় না। তারপরও হয়তো দিবসের সূত্র ধরে বিশ্বজুড়ে সন্তানরা আজও মাকে ভালবাসবে প্রতিদিনের মতো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে দিনটি পালন করা হয়। বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয় মে মাসের দ্বিতীয রবিবার। বিশেষ দিনটিকে উপলক্ষ করে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাবে তার গর্ভজাত সন্তানরা।
ইহজগতের নানাবিধ সম্পর্কের মাঝে মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কটির নেই কোন তুলনা। মা, আম্মা, আম্মি কিংবা আম্মু যে নামেই ডাকা হোক, এমন মধুর আর কোন শব্দের সন্ধান মেলে না শব্দকোষে। তাই তো সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘মা’ কবিতায় লিখেছেন যেখানেতে দেখি যাহা/ মা-এর মতন আহা/ একটি কথা এত সুধা মেশা নাই/মায়ের মতন এত আদর সোহাগ সে তো/ আর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই/ ছিনু খোকা এতটুকু/ একটুতে ছোট বুক যখন ভাঙিয়া যেতো, মা-ই সে তখন/ বুকে করে নিশিদিন/ আরাম-বিরামহীন/ দোলা দিয়ে শুধাতেন, কি হলো খোকন?’/…. মা’র বড় কেউ নাই/ কেউ নাই, কেউ নাই।/ নতি করি বল সবে ‘মা আমার! মা আমার!’

বাংলাদেশে ‘মা’ দিবস পালনের চল খুব বেশি দিনের নয়। তারপরও কি মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ পায়? বোধ হয় পায় না। মাকে ভালবাসার জন্য বিশেষ কোন দিনের প্রয়োজন নেই। মায়ের জন্য ভালবাসা প্রতিদিনের। তারপরও দিবস বলে কথা! দিনটি যাদের মনে থাকবে, তাদের মধ্যে কাজ করবে মাকে আরও বেশি ভালবাসার বাড়তি এক প্রেরণা।
‘মা তোমাকে আমি এতোটাই ভালবাসি যতটা ভালবাসি আমার নিজের অস্তিত্বকে। তুমি ছাড়া আমার অবস্থান শূন্য মা’। মাগো, আমার জন্য দোয়া করো যেন কখনও তোমাকে তিল পরিমাণ কষ্ট না দেই। ‘মা’ দিবসে এবং বাকি সবগুলো দিবসে ভালো থেকো ‘মা’।
আজ এই ‘মা’ দিবসে সেই মাকে সালাম যিনি রোগ-শোকে জঠরেই বাচ্চা হারিয়েছেন। সেই মাকে সালাম, যারা আসলে আমাদের কন্যা হয়েও মায়ের জায়গায় আছেন। সেই মাকে সালাম, যিনি বিশেষ শিশুর অধিকারী। সেই মাকে সালাম, যার সন্তান আজ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সেই মাকে সালাম, যার সন্তানেরা মানুষের জন্য নিজের জীবন বিলায়। সেই মাকে সালাম, যার সন্তান মুক্তিযোদ্ধা। সালাম ‘মা’ জননী। তোমরাই এ পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছো।’
‘আমার মাকে নিয়ে কত স্মৃতি, কত কথা যে রয়েছে, বলে শেষ করা যাবে না। মাকে নিয়ে কথা শুরু করলে শেষ হবে না। আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।’ ‘মা’ দিবস কি ? আমার ‘মা’ সেটাই জানে না…. জানার কোনো দরকারও নেই…. কারণ আমাদের চার ভাই বোনকে জন্ম দিয়ে মানুষ করতে করতেই তো তার জীবন পার হয়ে গেল…. তারপর নাতি পুতি আরো কত কিছু…. আর আমার কাছে ‘মা’ দিবস তো প্রতিদিনই। প্রতিক্ষণ আমি মাকে ডাকি…. মায়ের মুখের হাসিটাই আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ…..সকল মায়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা….‘মা’ আমাদের সবাইকে এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। জন্মের পরেই ‘মা’ শব্দটির সঙ্গে পরিচয় ঘটলেও, প্রথমবারের মতো এই শব্দটির মানে বুঝতে পেরেছি আমি যখন মূলত আমার সন্তানের দিকে তাকিয়েই মায়ের যথার্থতা বুঝতে পেরেছি। তাই বিশ্ব ‘মা’ দিবসের এই ক্ষণে আমি মায়ের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী এবং পৃথিবীতে সকল মায়ের প্রতি আমার ভালোবাসা। আমি জানি ‘মা’ শব্দটি সন্তানের কাছে কতটা প্রিয়।’
ছোট একটি শব্দ ‘মা’ কিন্তু এর বিশালতা অনেক। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক হচ্ছে ‘মা’। ‘আমি একজনকেই ‘মা’ ডাকি। এই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। ‘মা’ সব সময় সন্তানকে খুশি রাখতে চেষ্টা করেন। যত দুঃখ কষ্টেই ‘মা’ থাকুক না কেন সন্তানকে ঠিকই হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করেন। এখন এটা আমি অনুভূব করি। আমি জীবন যুদ্ধে যতই কষ্টে থাকি না কেন, আমার সন্তানকেও সুখী রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বিশ্ব ‘মা’ দিবসে একটাই চাওয়া সবাই আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন যেনো আমি আমার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। তবে মায়ের প্রতি আবেগটাও অন্য রকম। ‘আমার ধারণা প্রতিটি সন্তানের কাছে একদিকে পৃথিবী আর অন্যদিকে ‘মা’। মাকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলবো না। আমার কাছে প্রতিটি দিনই ‘মা’ দিবস। শুধু এটুকুই বলবো, ‘মা’ তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। ‘মা’ দিবসে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি আমার সালাম ও ভালোবাসা রইলো।’ ‘আসলে মা দিবস নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। আমার পুরো জগৎ জুড়ে রয়েছে আমার মা। অন্য সময়গুলো বলা হয় না, ‘মা’ আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তারা মুখ ফুটে সবসময় বলতে পারি না যে, ‘মা’ তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমি। তাই ‘মা’ দিবসে সেটা জানিয়ে দিতে চাই। প্রথম দিকে পরিবারের কেউ সাপোর্ট করতেন না, আমি মিডিয়াতে কাজ করি। আসলে ‘মা’ আমাকে ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। ভেতরে মূল্যবোধ তৈরি করেছেন, ভালো মন্দ বিভাজন করতে শিখিয়েছেন। যার কারণে আমার জীবনের পথচলাটা সহজ হয়েছে। অনেক ঝড়-ঝাপটার পর আমি আজকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি শুধু মায়ের ওই শিক্ষাগুলোর কারণে। বাবা-মার স্নেহ ভালোবাসার কারণে। মিডিয়ার কাজ নিয়ে যে শংকা বাবা-মার ছিল তা কেটে যায়, যখন আমি পড়ালেখা শেষ করে ঠিকঠাক মতো মিডিয়াতে কাজ করছি।
যখন ‘মা’ সাথে থাকেন স্মার্টনেস ক্রেজিনেস কিংবা স্টাইল প্রত্যেকটা জিনিস একটা জায়গা থেকে আসে সেটা হলো ‘মা’। সাপোর্ট ছিল, এখনো আছে। কিন্তু অভিযোজন ক্ষমতাটা যেখান থেকে আসে সেটা হলো মাকে কখনো বলা হয়নি ভালোবাসি। কারণ ভালোবাসাটা আমার বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। আমার প্রত্যেকটা প্রাপ্তি তাকে অনেক বেশি খুশি করে। যার কারণে এই মানুষটাকে আলাদা করে ভালোবাসি বলতে হয় না। সকল মায়েরা ভালো থাকুক আর সকল সন্তানরা এভাবেই এগিয়ে যাক মায়েদের ভালোবাসায়।
‘মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে, মাকে মনে পড়ে আমার, মাকে মনে পড়ে।’ এই সেই ‘মা’ পৃথিবীতে যাকে নিয়ে রচিত হয়েছে এ রকম অসংখ্য হৃদয়স্পর্শী গান, গল্প, ছড়া, কবিতা। সমাজের খুব গভীরে লুকিয়ে থাকা সীমাহীন অপ্রাপ্তি ও অমর্যাদার দেয়াল ভেদ করে যে ‘মা’ সন্তানকে সফল এবং প্রতিষ্ঠিত করার ব্রত নিয়ে আমরণ ত্যাগ স্বীকার করেন, সত্যিই এমন মায়ের ঋণ শোধ হওয়ার মত নয়। মায়ের জন্য ভালোবাসা প্রতিক্ষণ।
সব ধর্মেই মায়ের মর্যাদার কথা বার বার বলা হয়েছে। ইসলামে মায়ের মর্যাদা অসীম। মাকে মহান আল্লাহ্ তায়ালা সমাসীন করেছেন অভাবনীয় মর্যাদার আসনে। বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশ্ত। বুখারি শরীফের হাদিসে আছে রাসূল সা: কে এক সাহাবা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? নবীজি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ সাহাবা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? রাসূল সা: আবারো বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ সাহাবা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার?’ রাসূল সা: বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ সাহাবা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার?’ তারপর বললেন, ‘তোমার বাবার।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)
মাকে স্মরণ করে জগদ্বিখ্যাত মনীষী আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, ‘আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি অথবা যা হতে আশা করি, তার জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী।’ নেপোলিয়নের সেই সার্বজনীন কথাটি খুব প্রসিদ্ধ- ‘আমাকে একজন শিক্ষিত ‘মা’ দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো’।
কিন্তু এরপরও বিশ্বের সব মানুষ যাতে এক সাথে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে সে জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ‘মা’ দিবস পালন করা হয়। দিবসটিতে আলাদা করে অনেকেই মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছেন। অনেকে আবার একটি দিনকে ঘিরে ‘মা’ দিবস পালনের বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, মায়ের প্রতি সন্তানের অকৃত্রিম ভালোবাসা কোনো একটি দিনের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকতে পারে না। আর মাকে শ্রদ্ধা জানাতে কোনো আনুষ্ঠানিকতারও দরকার হয় না।
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ আমার ‘মা’, আর প্রিয় মধুরতম শ্রেষ্ঠ শব্দ ‘মা’। ‘মা’ ডাকে প্রাণ জুড়ায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শহর-গ্রামগঞ্জে এখনো এমন অনেক ‘মা’ আছেন যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সন্তানরা প্রকৃত শিক্ষায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। একজন ‘মা’ তাদের সন্তানদের জীবন গড়তে যে কী ভূমিকা রাখেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমার ‘মা’। তিনি আমাদের চার ভাইবোনদের সাথে সবসময় বন্ধুর মতো আচরণ করতেন। কোনো সমস্যা হলে আমরা মায়ের সাথেই শেয়ার করতাম। এমন মায়ের জন্য আমরা গর্বিত।
আর পৃথিবীর বুকে আমাদের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল ‘মা’। যত আবদার যত অভিযোগ সবই মায়ের কাছে। নাড়িছেঁড়া ধন সন্তানের জন্য ১০ মাস ১০ দিন শুধু নয়, মায়ের সারাটা জীবন উৎস্বর্গ করেও যেন মায়ের তৃপ্তি নেই। কিন্তু সেই মায়ের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি আমরা? মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য পথ চলার পাথেয়। পৃথিবীর সব সফলতা একমাত্র মায়ের দোয়ার বদৌলতেই আসতে পারে।
ত্রিভুবনের সবচেয়ে মধুরতম শব্দ ‘মা’। সবচেয়ে প্রিয়, পবিত্র, সর্বজনীন শব্দ ‘মা’। মায়ের ভালোবাসার ক্ষমতা বিজ্ঞানের মাপকাঠিতেও নির্ণয় করা সম্ভব নয়। ‘মা’ প্রথম কথা বলা শেখান বলেই মায়ের ভাষা হয় মাতৃভাষা। ‘মা’ হচ্ছেন মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। দুঃখে-কষ্টে, বিপদে-সংকটে যে মানুষটি স্নেহের পরশ বিছিয়ে দেন, তিনি হচ্ছেন আমাদের সবচেয়ে আপনজন, ‘মা’। প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা একমাত্র মায়ের। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গে চলে না। ইসলাম মাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে।
আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ঘোষণা করেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। ‘মা’ জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, সুতরাং আমার (আল্লাহ্র) প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)।
একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামী (রা.) রাসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?’ জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, তোমার ‘মা’ আছেন? তিনি বললেন, আছেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তাঁর পায়ের নিচেই জান্নাত’। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম’- (ইবনে মাজাহ-মিশকাত, পৃ. ৪২১)।
অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন। (বায়হাকি-মিশকাত, পৃ. ৪২১)।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আরও ঘোষণা করেন, ‘আর আমি (আল্লাহ) মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে, তার ‘মা’ তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন ও অতি কষ্টে প্রসব করেছেন এবং লালন-পালন করেছেন’। (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)।
আরও বলা হয়েছে যে, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো’। (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)।
মায়ের অসিলাতেই মানুষের আগমন পৃথিবীতে। মায়ের কোলে বসেই প্রথম পৃথিবী দেখা। আকাশের পানে তাকানো। ‘মা’-ই মানুষের প্রথম আশ্রয়। দয়াময় আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত ‘মা’। ‘মা’ সন্তানের জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ। ‘মা’ ছাড়া পৃথিবী প্রাণহীন দেহের মতো। মায়ের মমতা-ভালোবাসায় সন্তান বেড়ে ওঠে। আমাদের প্রাণের ধর্ম ইসলামে মায়ের মর্যাদা অতুলনীয়-অসামান্য। অনন্য উচ্চতায় মায়ের স্থান। ইসলামের বিধান মতে, দয়াময় আল্লাহর পরই মা-বাবার স্থান। মহান আল্লাহ তাঁর কালামে পাকে বলেন-‘তোমার পালনকর্তা আদেশ দিয়েছেন, তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করো। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের ‘উফ’ বলো না এবং ধমক দিও না। তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলো। মমতাবশে তাদের প্রতি নিষ্ঠুতার পক্ষপুট অবনমিত করো এবং বলো, ‘হে আমার পালনকর্তা! তাদের প্রতি রহম করো, যেরূপ দয়ামায়া দিয়ে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪)।
সন্তানের ওপর অলংঘনীয় কর্তব্য হলো, মায়ের অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা, মাকে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দেয়া, মায়ের সঙ্গে থাকা, মায়ের সেবা-যত্ন করা, সবসময় তার সম্মান ও অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সচেতন থাকা। সন্তানের জীবনে মায়ের গুরুত্ব সম্পর্কে নবীজির এ হাদিসের চেয়ে বড় কোনো দলিলের প্রয়োজন নেই। হাদিসে বর্ণিত, মা-বাবার সন্তুষ্টি ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া কঠিন।
তাই আমাদের মনে রাখতে হবে। বেঁচে থাকলে আমরাও মা-বাবা হব। আর আমাদের মা-বাবার মতো সময় আমাদেরও একদিন আসবে। আমরা আমাদের মা-বাবার সাথে কি ধরনের ব্যবহার করছি বা তাদের সাথে আমাদের কি ধরনের সম্পর্ক তা কিন্তু আমাদের সন্তানরা দেখে এবং সেখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে। তাই নিজের মা-বাবার সাথে কোন্ ধরনের ব্যবহার করছেন তা একটু চিন্তা করা এবং চোখ বন্ধ করে ভবিষ্যতের চিত্রের দিকে একটু তাকানোর চেষ্টা করা উচিত।
বৃদ্ধাশ্রমে অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের ছেড়ে বহু কষ্টে দিন যাপন করছেন। একটিবার তাদের স্থানে নিজের কথা চিন্তা করে দেখা উচিত। যৌবনেই চিন্তা করুন, বৃদ্ধ বয়সে আপনার সন্তানরা আপনাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখলে কেমন লাগবে। পরিশেষে, ‘মা’ দিবসের শ্লোগান হোক একটাই. আর তা হল- সন্তান থাকতে বৃদ্ধাশ্রম যেন একজন মা-বাবারও আশ্রয়স্থল না হয়।