গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর সহ চারজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে  মামলা

489

স্টাফ রিপোর্টারঃ  জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর সহ চারজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার জয়পুরহাট সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দুটি দায়ের করেছেন আক্কেলপুর উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান এবং আক্কেলপুর পৌর আ.লীগের সাবেক আহবায়ক এনায়েতুর রহমান আকন্দ।
অভিযুক্তরা হলেন আক্কেলপুর পৌর মেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর, আক্কেলপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আতিকুর রহমান, বিএনপি নেতা জামশেদ আলম ও আক্কেলপুর মহিলা কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক ফারুক আলম চৌধুরী।
শুনানী শেষে সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এম.এ রব হাওলাদার আমলে নিয়ে মামলা দু’টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে দায়ের হওয়া মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, পৌর মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ২০১৪ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। সে সময় তিনি হলফ নামায় নিজের সম্পদ ১৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৪১২ টাকা এবং স্ত্রীর সম্পদ দেখিয়েছিলেন মাত্র ২৫ হাজার। বিগত ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনেও তিনি আক্কেলপুরে আ.লীগের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র পদে অংশ নেন। সেখানে তিনি ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে দাখিল করা হলফনামায় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৩৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ৩৭২ টাকা। আর স্ত্রী নামে সম্পদ দেখিয়েছেন ৫ লক্ষ ২০ হাজার ৬৯৬ টাকা। বর্তমান তাঁর জয়পুরহাট শহরে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের দুটি বিলাসবহুল বাড়ি, নিজ ও স্ত্রীর নামে পৃথক দুটি দামি প্রাইভেট কার ছাড়াও অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।
দায়ের হওয়া দুটি মামলাল একটিতে উল্লেখ করা হয়েছে জাাল সনদে চাকুরি করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই তারিখে আক্কেলপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক ফারুক আলম চৌধুরীকে বরখাস্ত করে তৎকালীন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ অবহিত করলে ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারী শিক্ষা বোর্ড শাস্তির পরিবর্তে অভিযুক্ত গ্রন্থাগারিককে যোগদান করে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ডিপোমা কোর্স সম্পাদনের জন্য ফারুক চৌধুরীকে এক বছর ছুটি দেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয় অধ্যক্ষকে। বোর্ডের ওই বে-আইনী সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে কলেজ পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত নাজমুল হুদা উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন করলে আদালত শিক্ষা বোর্ডের ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। যা ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বহাল থাকে। কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায় কলেজ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অধ্যক্ষ আতিকুর রহমান ও অপর সদস্য জামশেদ আলমকে সাথে নিয়ে ২০১৪ সালের ২৩ জুলাই সভা ডেকে ওই গ্রন্থাগারিককে অবৈধ ও বে-আইনীভাবে বেতন প্রদান করেন। এ ছাড়া তাঁরা অবৈধ গ্রন্থাগারিক ফারুক চৌধুরীর কাছ থেকে এমপিও’র সরকারি টাকা সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
অপর মামলা সুত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুর উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান একজন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স রোজী চাউল কল। আক্কেলপুর পৌরসভার গেট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজে অংশ নেওয়ার জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র আহবান করা হলে তিনি তাতে অংশ নেন। গত ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর দরপত্র বাক্সে দাখিল করা দরপত্র অনুযায়ী ওই কাজের সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে চুড়ান্ত দরপত্র রিপোর্টে এক নম্বরে স্থান হয় মজিবর রহমানের।। যাবতীয় কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্বেও পৌর মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে তাঁর দরপত্র বাতিল করেন। পরে অর্থের বিনিময়ে সাহা ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে তিনি বেশি মূল্যে কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেন। এতে সরকারের ৩০ হাজার টাকারও অধিক রাজস্ব ক্ষতি হলেও তিনি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। একইভাবে আরও দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র আইন অমান্য করে অবৈধভাবে বেশি মূল্যে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ সম্পন্নের দায়িত্ব প্রদান করে সরকারের আরও ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৭৭০ টাকার রাজস্ব ক্ষতি করেছেন। পক্ষান্তরে নিজে লাভবান হয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের স্পেশাল কৌঁসুলি নন্দকিশোর আগরওয়ালা পৌর মেয়রসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়েয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর বলেন, উদ্দ্যেশ্যে প্রনোদিতভাবে আমার সম্মানহানী ও সমাজে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এমন মামলা দায়ের করেছেন। আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পর্ণ ভিত্তিহীন।