কদমরসুল সেতু নির্মিত হবে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে

493

স্টাফ রিপোর্টারঃকদমরসূল ব্রীজ’ এর মধ্যে দিয়ে অবশেষে  দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে বন্দরবাসীর। ২০২২-২০২৩ সালের মধ্যে কদমরসুল  সেতু পূর্ণাঙ্গরূপ পাবে বলে নিশ্চিত করেছে ‘কদমরসূল সেতু’প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আবু সালেহ্ মো. হানিফ। ০৯.০১.২০ তারিখ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কদমরসুল সেতুর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানায়।

এর আগে দুপুর ১২টায় ৫নং গুদারাঘাট ও বন্দর ইস্পাহানি এলাকা পরিদর্শন করে। প্রকল্পের পরামর্শক  দুই কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ডংসাং ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেডের প্রতিনিধি  কিম কি-সাক ও ডিএম ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেডের প্রতিনিধি চাও ইউকিওং।

এ সময় আরো  উপস্থিত ছিলো, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান,  ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যানিং এন্ড কন্সালটেন্টস লিমিটেডের (ইপিসি)এর মো আব্দুল ওয়াদুদ, সয়েলস অ্যান্ড ফাউন্ডেশনস লিমিটেড এর কন্সালটেন্ট  জাকারিয়া পাঠান প্রমুখ।  পরিদর্শন শেষে তারা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

কদমরসুল  সেতু প্রকল্প :নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর একনেকের এক সভায় ‘কদমরসুল সেতু’ অনুমোদন লাভ করে।  এরপর  একই বছর ১৮ ডিসেম্বর জিও কর্তৃক অনুমোদিত হয়। সেতুটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে  ৫৯০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা । এর মধ্যে মূল সেতুর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪৩০ কোটি টাকা। বাকি ১৬০ কোটি টাকা জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক ব্যয় ধরা হয়েছে।

সেতুটি ৫নং ঘাট থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর বন্দরের একরামপুর হয়ে ১৩৮৫ মিটার (আনুমানিক) দৈর্ঘ্যে নির্মিত হবে। মূল সেতু ৩০০ মিটার ও ব্রীজের রাস্তা হবে ৩.৫০ কিলোমিটার। সেতুর উভয়পার্শ্বেই থাকবে ফুটপাত।

কদমরসূল  সেতুর প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে রয়েছে দুটি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান  চারটি প্রতিষ্ঠান-ডংসাং ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড, ডিএম ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড, ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যানিং এন্ড কন্সালটেন্টস লিমিটেড (ইপিসি) ও সয়েলস অ্যান্ড ফাউন্ডেশনস লিমিটেড।

এদিকে এ প্রকল্পের অনুমোদিত বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ০১.০৭.১৮ তারিখ থেকে ৩০.০৬.২২ তারিখ পর্যন্ত হলেও  সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।  এ বিষয়ে ‘কদমরসূল সেতু’ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আবু সালেহ্ মো. হানিফ জানায়, ২০১৮ এর জুলাই থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও একনেকে অনুমোদন পাশ হয় অক্টোবরে। তারপর এর অর্থায়ন ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য সময়মত কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।  তবে আগামী ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে আশা রাখছি।

কদমরসূল সেতুর বিশেষত্ব: কদমরসূল সেতু বাংলাদেশের তৃতীয় বিশেষ সেতু। এর বিশেষত্ব হল সেতুটির স্প্যানের (খুঁটি)  মধ্যে ২০০ মিটারের দূরত্ব থাকবে। সাধারণত অন্যান্য সেতুগুলোতে এর দূরত্ব হয়ে থাকে ১০০ মিটার। কদমরসূল সেতুটি বিশেষভাবে নির্মাণের কারণ এ শীতলক্ষ্যা নদী নারায়ণগঞ্জের শিল্প-বাণিজ্যের জন্য অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম।

প্রতিদিন বিভিন্ন ব্যবসায়িক জাহাজ,লঞ্চ,স্টিমার,কার্গোসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করে থাকে। মূলত এ বিষয়টি মাথায় রেখেই এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ২০০ মিটারের দুরত্বের এমন সেতু রয়েছে কর্ণফুলী নদীতে। অন্যটি বরিশালে লেবুখালিতে নির্মানাধীন রয়েছে।

এছাড়া কদমরসুল সেতুর আরো একটি বিশেষত্ব হল সেতুটি ক্যাবললিস্টেড (ঈধনষবষরংঃবফ) নকশায় নির্মাণ করা হবে।  বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এ ধরণের সেতু নির্মাণ করা হবে।

এ বিষয়ে ‘কদমরসূল সেতু’প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আবু সালেহ্ মো. হানিফ জানান, বাংলাদেশে ২০০ মিটার দুরত্বের স্প্যান নির্মাণ এরকম সেতু তৈরী করার মত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তেমন ইঞ্জিনিয়ার নেই। আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা  কাজ করে থাকে  সর্বোচ্চ ৫০ মিটার পর্যন্ত। আমরা এ বিষয়ে বুয়েটের  সহযোগীতাও চেয়ে ছিলাম। কিন্তু এ ধরণের ব্রীজ নির্মাণের পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় সম্ভব হয়নি।

তাই আমরা আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। এজন্যই মূলত প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।২০১৯-২০২০ সালের মধ্যেই সেতুর দৃশ্যমাণ কাজ শুরু হবে।

কদমরসুল সেতু প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক  প্রকৌশলী  কামরুল আহসান জানান,  সেতুটি  নির্মাণের জন্য ভূমি পরীক্ষাসহ অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।