বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনসাধারণের ভোগান্তি

506

আশিকুজ্জামানঃ বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সরকারি স্বাস্থসেবা নেয়ার জন্য বন্দরবাসীর হাতের নাগালে একমাত্র চিকিৎসালয় এটি। নবীগঞ্জ বাসস্টেশন থেকে প্রায় ২০০ গজ দক্ষিণে মদনগঞ্জ সড়কের পূর্ব দিকে অবস্থিত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে ছুটে আসে বহু রোগী। তাই চাপ সামলাতে ৩১ শয্যা থেকে উন্নতীকরণ করে ৫০ শয্যা করা হয়েছে।

এরপর স্বাভাবিকভাবেই এখানে সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার কথা থাকলেও কার্যত তা হয়ে উঠছে না। ফলে ভোগান্তির শিকার হয়ে রোগীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এ হাসপাতাল থেকে। চিকিৎসা করাচ্ছে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবোকাঠামোগত ত্রুটি, জনবল সংকট, পর্যাপ্ত ঔষধের অভাবসহ নানারকম সমস্যা এখানে। নেই ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে মেশিন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর শৌচাগারগুলোর অধিকাংশেরই বেহাল অবস্থা। উঁপর থেকে পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। যা কিনা ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী। একমাত্র অপারেশন থিয়েটারটিতেও বিরাজ করেছে ভুতুরে এক পরিবেশ।

অন্যদিকে, জরুরি বিভাগে বিশেষ প্রয়োজনে দেখা মিলছে না শিশু বিশেষজ্ঞ, কার্ডিওলজিস্ট, কিংবা সার্জারিক্যাল ডাক্তারদের উপস্থিতি। তাই সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং ইন্টর্নশিপে থাকা গুটি কয়েক ডাক্তার।

এসব কর্মচারী এবং ডাক্তাররা প্রায় সময়ই না জেনে বুঝেই অন্ধকারে ঢিল মারার মতো সিদ্ধান্ত নেয়। তখন অথই জলে ভাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

(২৯ জানুয়ারি) বুধবার বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কথা হয়, চৌধুরী বাড়ী এলাকার আসমা বেগমের সাথে। তিনি বলে, আমার মেয়ের পা কেটে গেছে তাই দ্রুত এখানে এনেছি চিকিৎসা করাতে। কিন্তু ডাক্তার কোন রকম কাপড় দিয়া পা বেধে দিলো।

আর ঔষধ হিসেবে সিভিট ও এইস সিরাপ দিসে কিন্তু এই ঔষুধ হাসপাতালে নাই। আর ভালো করতে পরে কি কি করতে হইবো তাও কিছু বলে নাই। এখন তো মেয়েরে নিয়া নদীর ওই পার বড় হাসপাতালে যেতেই হবে।

সাধারণত সিভিট আর এইস সিরাপ মুদি দোকানে পাওয়া গেলেও একটি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এর অনুপুস্থিতি অবাক করার মতো। এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা ডা.আবদুল কাদের হাসতে হাসতে জানায়, আসলে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ঔষধের সাপ্লাই নেই।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা আকবর মিয়া নামে একজন বলে, ‘সকালে আসছি আমার স্ত্রীকে নিয়া তাঁর বুকে অনেক ব্যাথা। জরুরি বিভাগে নেয়ার পর ১ ঘন্টা পার হলেও ভালো একজন ডাক্তার এখনো আসেনি। এখানে যেসব ডাক্তার আছে তাঁরা বুঝেই না যে কি হইসে। খালি এদিক সেদিক দৌঁড়ায়।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অফিসার মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘হাসপাতালটিতে ডাক্তার এবং জনবলের সংকট অনেক আগে থেকেই। আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি দ্রুতই এর ব্যবস্থা করা হবে।

পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি এখনো বিভিন্ন উপজেলায় দেয়া হয়নি তবে আস্তে আস্তে দেয়া হবে। আর কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অবশ্যই আমি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে টয়লেটসহ অন্যান্য যেসব সমস্যা রয়েছে সেটা দেখতে বলবো। এবং পর্যাপ্ত ঔষধও সেখানে দেয়া হবে।’