মোঃ মোক্তার হোসাইন :নারায়নগঞ্জ সোনারগাঁ-
সর্ব প্রথম সোনারগাঁয়ের বাজারে আসতে শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রসালো লিচু। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়ায় ও প্রচুর খরা থাকায় লিচুর ফলন কম হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লিচুচাষি ও ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত খরার কারণে আগেই পেকেছে এ লিচু।
সোনারগাঁয়ের লিচু আগাম বাজারে আসে বলে দেশের বিভিন্ন স্থানের লিচুর তুলনায় এ লিচুর চাহিদা থাকে বেশি। মিষ্টি ও সুস্বাদু হিসেবে সোনারগাঁয়ের লিচু সারা দেশে বেশ পরিচিত। বৈশাখের শেষ সময়ে এ লিচু প্রথম বাজারে আসে।
সোনারগাঁও উপজেলা লিচুর বাগানে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাগানের গাছে থোকায় থোকায় কাঁচা-পাকা লিচু ঝুলছে।
গাছের ডালে ডালে ঝুলন্ত লাল টকটকে রঙের ছোট ফলের গুচ্ছ লিচুর দৃশ্য খুবই মনোরম। ব্যবসায়ীরা প্রতিটি গাছে বৈদ্যুতিক বাতি, টিনের বাজনা বাজিয়ে উচ্চশব্দ করে বাদুর ও কাকের উপদ্রব থেকে লিচুকে রক্ষা করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন লিচু চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রামে লিচুর জন্য বিখ্যাত। তবে সোনারগাঁ পৌরসভার গোয়ালদী, হরিষপুর, দুলালপুর, পানাম গাবতলী, খাসনগর দিঘীরপাড়, চিলারবাগ, ইছাপাড়া, দত্তপাড়া, হাতকোপা, অজুন্দী, বাগমুছা, গোবিন্দপুর, লাহাপাড়া, বালুয়াদিঘীরপাড় ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া, হামছাদী, দামোদরদী, পঞ্চবটী, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া ও গোহাট্টা এলাকায় সবচেয়ে বেশি লিচুর বাগান রয়েছে,এর মাঝে বৈদ্দ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাধুর বাগের লিচু অন্যতম।
এসব এলাকার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ও আশপাশের ভিটা বাড়িতে লিচুর চাষ করা হয়।
স্থানীয় চাষিরা জানান, সোনারগাঁয়ে বর্তমানে কদমি, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, এলাচি ও পাতি এ পাঁচ ধরনের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য লিচু থেকে বর্তমানে কদমি লিচু চাষের প্রতি মনোযোগী হয়ে পড়েছেন চাষিরা। প্রতি বছর একেকটি বাগান ৪ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তাই চাষিরা কোথাও একটু খালি জায়গা পেলে সেখানেই কদমি লিচুর বাগান তৈরি করছেন।
সোনারগাঁয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এ বাগানে বেশির ভাগই কদমি লিচু চাষ হচ্ছে। শুরুতে ১০০ কদমি লিচু ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। বোম্বাই লিচুর ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাতি লিচু ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। তবে এ বছর দাম একটু বেশি হবে।
গোয়ালদী গ্রামের লিচু বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর প্রচুর খরার কারণে লিচুর বেশির ভাগ মুকুল শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। অতিরিক্ত খরার কারণে লিচুগুলো বড় হওয়ার সময় পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় অনেক লিচু গাছে ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। লিচু ফলনের সময়ে ঝড়ের কারণে ক্ষতি না হলেও এবার খরার কারণে গাছেই নষ্ট হয়ে গেছে বেশিরভাগ লিচু।
লিচু বিক্রেতা আহম্মেদ আলী বলেন, অন্যান্য এলাকার লিচুর চাইতে সোনারগাঁয়ের লিচু আকারে একটু বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর চাহিদা বেশি রয়েছে। আর সোনারগাঁয়ের লিচু সবার আগে বাজারে আসে তাই এর চাহিদা একটু বেশি।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সোনারগাঁয়ে মাটি ও আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর ফলন কম হয়েছে। তবে, অতিরিক্ত খরার কারণে এ বছর কিছুটা ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে স্বীকার করলেও দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।