মামলার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য, রূপগঞ্জে আয়কর অফিস দূর্ণীতির আখড়া

634

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ আয়কর অফিসে ব্যাপক ঘুষ দূর্ণীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অফিস কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও গ্রাহকদের মামলার ভয় দেখিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েক কোটি টাকা।

জানা গেছে, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার অঞ্চলের আয়কর অফিস নারায়ণগঞ্জ থেকে স্থানান্তর করে গত ৬ মাস ধরে রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় কার্যক্রম চালু করেন। এখানে অফিস স্থানান্তরের পর থেকেই গ্রাহকদের ফাইলে ভুল তথ্য প্রদান করার অজুহাতে ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের নোটিশ করা হয়। অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. জহিরুল ইসলাম খান ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. আবু ওবাইদার (ওবায়েদ) সাথে নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে দেখা করার কথা বলা হয়। এই দুই কর্মকর্তার সাথে দেখা করলেই নোটিশ নিষ্পত্তির জন্য ১লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করা হয়। অন্যথায় গ্রাহকদের নামে ওয়ারেন্ট করিয়ে গ্রেফতার করার হুমকি দেয়া হয়।

আয়কর অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, নিয়মিত আয়কর পরিশোধ করার পরও গ্রাহকদের নোটিশ করে অফিসে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন গ্রাহক প্রতি বছর ৩ হাজার টাকা করে আয়কর পরিশোধ করেন। চলতি বছর ৫ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছেন। তাকেও নোটিশ করা হয়েছে। অফিসে আসার পর তার কাছ থেকে নোটিশ নিষ্পত্তির জন্য ২ লাখ টাকা দাবি করেন জহিরুল ইসলাম খান ও আবু ওবায়েদ। অন্যথায় মামলা করে চার্জশীট দেয়ার হুমকি দেন।

স্থানীয় ইটভাটার মালিক রিয়াজউদ্দিন ভুঁইয়া ও হাজী শপিং কমপ্লেক্স মার্কেট মালিক হাজী সামছুল হক মিয়া জানান, তাদেরও নোটিশ করা হয়েছে। দুজনের কাছেই পৃথকভাবে ২০ লাখ করে টাকা দাবি করেছেন ঐ দুই কর্মকর্তা। এখানে নতুন গ্রাহকদের আয়কর ৩ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয় ৫হাজার টাকা।

অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১ হাজার টাকার কমে কোনো প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করেন না কর কমিশনার জহিরুল ইসলাম খান। এতে অনেকেই আয়কর পরিশোধে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

গোপালদী পৌরসভার মেয়র হালিম সিকদার জানান, নিয়ম মেনেই প্রতিবছর আয়কর পরিশোধ করা হচ্ছে। চলতি কর বছরে নোটিশ করেই অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার জহিরুল ইসলাম খান অফিসে গিয়ে দেখা করার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, কয়েকজন গ্রাহক লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে আয়কর ফাইলের নোটিশ প্রত্যাহার করেছেন। যারা স্বেচ্ছায় আয়কর পরিশোধ করছেন তাদেরকেই নোটিশ করে হয়রানি ও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। যারা কোটি টাকার মালিক কিন্তু আয়কর দেন না তাদের বিরুদ্ধে কোনো নোটিশ বা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। দুর্ণীতিবাজ এসব কর্মকর্তাদের চাকুরিচ্যুত করার দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সার্কেল-১১ (রূপগঞ্জ) কর অঞ্চলের তদন্ত কর্মকর্তা মো. আবু ওয়াইদা জানান, যে সকল গ্রাহক তাদের ফাইলে তথ্য গোপন করেছেন তাদেরকেই নোটিশ করা হয়েছে। তাছাড়া বছরে ৪০ জন আয়কর গ্রাহককে নোটিশ করার জন্য উপরমহল থেকেই বলা আছে।

অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, সরকারি সব অফিসেই অনিয়ম হয়। সরকারি বেতনে সংসার চলে না। আয়কর অফিসে শীর্ষ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই গ্রাহকদের নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়ে থাকে। তবে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।