সিদ্ধিরগঞ্জে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে কথিত সাংবাদিকরা

527

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি : সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এ পেশার পদবীর সাথে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের একটি আস্থা ও সম্মান জড়িত। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অসাধু মূর্খ ব্যক্তিরা এ পেশার সাইনবোর্ডকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় জনমনে একটু আস্থা সংকট তৈরী হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে সাংবাদিকতার আড়ালে মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজীকালে বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ায় পেশাদার সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তাদের এ অপতৎপরতার কারনে আইনশৃক্সখলা বাহিনী থেকে শুরু করে সুশিল সমাজে এ ভাইরাস থেকে সাংবাদিকতা নামক মহান পেশার ভাবমূর্তি রক্ষা করতে আলোচনা শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সদ্য যোগদানকারী জেলা প্রশাসক মো: জসিম উদ্দিনের সাথে জেলার পেশাদার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় তা জোড়ালো হয়।
জানা যায়, যারা কখনো স্কুল কিংবা কলেজের চৌকাঠ মাড়ায়নি। নেই শিক্ষাগত যোগ্যতা। নিজের নামটি লিখতে ভাঙ্গে কলম। এখন তিনারা সাংবাদিক। যারা এক সময় গার্মেন্টসে কাজ করত, কখনো গাড়ির হেলপাড়ি করত, ধান্দাবাজি, লোক ঠকানোর কাজ করতো আগে থেকেই। আবার কেউ কেউ বিয়ে করেছেন একের অধিক, ইয়াবা-হিরোইন ব্যবসা করছেন দিব্যি। কেউ কিছুই করতে পারবে না ওনাদের কারণ তিনারা এখন “সাংবাদিক”।
নিজের টাকা খরচ করে ডুমেইন হোষ্টিং কিনে করেছেন অনলাইন টিভি, যার মালিক নিজে, রিপোর্টারও নিজেই। সাথে নিয়েছেন পতিতার কাজে লিপ্ত কয়েকজন মেয়েদের। তারাও নাকি “নিউজ প্রেজেন্টার”। কেউ কেউ আছে ঢাকা থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার কার্ড নিয়ে ছোট খাটো ফেক্টরী, মিষ্টির দোকান, ওষুধের দোকানসহ নানা কলকারখানাতে যান টাকা উঠান, ওটাই নাকি সাংবাদিকতা।
সম্প্রতি নিজেদের বড় মাপের সাংবাদিক জাহির করতে মাঝে মাঝে এ সমস্ত অখ্যাত পত্রিকার কিংবা আইপি টিভির নাম ব্যবহার করে র্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর অনুষ্ঠানে এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে পেশাদার সাংবাদিকরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে। তাদের তৎপরতায় পেশাদার সাংবাদিক সমাজ রীতিমত থাকছে আতংকে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন কলকারখানাতে প্রতিদিনই এই বাহিনীর হানা চলছে। টাকা না পেলে র্যাব পুলিশ ও ভ্রাম্যমান আদালত দিয়ে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে। তাদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীরা অসহায় জীবন যাপন করছে।
সানারপাড় বাসস্ট্যান্ড এর পাশে বাঙ্গালীমার্কেট সংলগ্ন তিনতলা বিশিষ্ট বাড়িটির নিচতলা একটি ছোট রুম ভাড়া নিয়ে অফিস করেছে একটি সাংবাদিক নাম ধারী প্রতারক চক্র। প্রতিদিন দুই থেকে তিন জন মেয়ে আর দুই তিন জন ছেলে মিলে অফিসটিতে অসামাজিক কার্যকলাপ করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে নিউজ ২১ বাংলা নামের ভুয়া টেলিভিশনের মালিক টিপু দুলাল ওরফে দুলাল রানার ম্যারেজ মিডিয়ার ব্যবসা। সে ঢাকার উত্তরায় প্রতারনার দায়ে নারী ঘঠিত মামলায় যাত্রাবাড়ি থানায় জেল খেটে উত্তরা এলাকা ছেড়েছে। বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাকে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আর ঢাল হিসেবে বেছেনিয়েছেন সাংবাদিকতা।
সাদা রঙ্গের যে নোহা গাড়িটির দিয়ে সাংবাদিক সেজে চাঁদাবাজি করছে সে গাড়িটির চালক নুরে আলম ওরফে শিকদার। তিনি ঢাকার শ্যামপুরের নামকরা কিলার নুরু নামে পরিচিতি। টানা আট বছর হত্যা মামলার আসামী সেজে খেটেছেন জেল। নিজের আপন শালা ফতুল্লার হান্ডেড বাবু। আর দুলা ভাই শিকদার নুরু করেন হিরোইন ব্যবসা। নিজেকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে হয়েছেন সাংবাদিক। এই টিমের আর একজন সেলিম। তিনি নিজের নামও লিখতে পারেন না। তাদের শেল্টারদাতা হিসেবে রয়েছেন হাফিজ নামের এক মাদ্রাসার ছাত্র। তার বাড়ি মাদারীপুর। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রানের বাংলাদেশে কাজ করেছেন। তিনি নাকি মেয়ে পেলে সবই করতে পারেন। তাই তাদের সাথে মেয়ে থাকায় হাফিজের কোন সমস্যা নেই। কেউ কিছু বললেই সরকার দলীয় লোকদের দাপট দেখায় হাফিজ। এদের সাথে রয়েছেন ভবিষ্যত বাংলাদেশের সম্পাদক ও প্রকাশক পাথর আহম্মেদ, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ফটো সাংবাদিক মান্নান আহম্মেদ মুন্না। তার ভিজিটিং কার্ডে রয়েছে বিকাশ নাম্বারও।
সচেতন মহলের দাবি এসকল প্রতিভাবান সাংবাদিকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসলে হয়ত এদের অত্যাচার থেকে মুক্তি মিলতো সাধারন মানুষ ও ব্যবসায়ীদের।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) এইচ এম জসিম উদ্দিন জানান, অপরাধী কেউই ছাড় পাবেনা। সাংবাদিকতার নামে যদি কেউ অন্য কিছু হাসিল করতে চায়। অপরাধ সংঘঠিত করতে চায় তাদের কোন ভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।