সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান চলবে-প্রধানমন্ত্রী

317

সময়ের চিন্তা ডট কমঃদলের নেতাকর্মীদের সৎভাবে জীবনযাপন করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান চলবে। জনগণের টাকা কারও ভোগবিলাসের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। মনে রাখতে হবে অবৈধ, চোরা টাকায় বিরিয়ানি-পোলাও খাওয়া সম্মানের নয়। সৎ টাকায় সাধাসিধে জীবনযাপন করা সম্মানের।’

শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবসময় মনে রাখতে হবে বিএনপি, জাতীয় পার্টির মত দলগুলো অবৈধভাবে হত্যা, ক্যূর মধ্য দিয়ে জন্ম হয়েছে। এরা মাটি থেকে উঠে আসেনি। তারা সুবিধাভোগী, খাওয়া পার্টি। মানুষকে কিছু দিতে পারে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের তো একটা লক্ষ্য উদ্দেশ্য আছে। জনগণের কল্যাণের চিন্তা করে প্রথম বিরোধী দল হিসেবে যাত্রা শুরু করে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে।’

আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের নীতি আদর্শ হচ্ছে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। উন্নত জীবনমান দেয়া। বঙ্গবন্ধু যেটা করেছেন। নিজে কি পেলেন না পেলেন সেই চিন্তা তিনি কখনো করেননি। সেই আদর্শ বুকে ধারণ করে আমাদের চলতে হবে। জনগণের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কি দিতে পারলাম সেটা চিন্তা করতে হবে।’

এসময় তিনি বলেন, কেউ অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করবেন, বিলাসবহুল জীবন যাপন করবেন আর কেউ সৎভাবে জীবন যাপন করে সাদাসিধে জীবনযাপন করে তার জীবনটা নিয়ে কষ্ট পাবেন, তা হতে পারে না। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরিয়ানি পোলাও খাওয়া আর ব্র্যান্ড পরা থেকে সাদাসিধে জীবনযাপন করা অনেক সম্মানের। অন্তত সারাক্ষণ অবৈধভাবে চোরা টাকা, এটা মনে আসবে না। শান্তিতে ঘুমানো যাবে।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু ওই টাকার (অবৈধ) ফলে ছেলে-মেয়ে বিপথে যাবে। ছেলে মেয়ের পড়াশোনা নষ্ট হবে, মাদকাসক্ত হবে। সেগুলো দেখার সময় নাই। টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে তো নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এই ধরনের একটা সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না। আমরা চাই সৎ পথে কামাই করে যে চলবে, সে সম্মানের সঙ্গে চলবে। সৎ পথে কামাই করে যে থাকবে সে সমাজে সম্মান পাবে।

আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীকে সৎভাবে জীবনযাপন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চোরা টাকা, দুর্নীতির টাকা নিয়ে যতই বিলাসিতা করুক মানুষ মুখে হয়তো বাহবা দিবে, পেছনে হয়তো একটা গালিও দিবে- ওই বেটা দুর্নীতিবাজ, চোর। সেই গালিটা হয়তো শোনা যাবে না, বোঝা যাবে না। কিন্তু সেই গালিটা খেতে হয়। এই কথাটা মনে রাখতে হবে, জাতির পিতা সারাজীবন সাদাসিধে জীবনযাপন করে গেছেন। কাজেই আপনারা যারা তার আদর্শের সৈনিক সেই অনুযায়ী চলতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘টাকা বানানো একটা রোগ, এটা ব্যারাম। একবার বানানো শুরু করলে বানাতেই থাকে। কিন্তু অন্যদিকে পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে, ছেলে মেয়ে বিপথে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে তাকানোর সময় নেই। শুধু ছুটছে তো ছুটছে টাকার পেছনে। এটা বন্ধ করতে হবে।’

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের সম্পদ লুটে খায়, দেশের জনগণের জন্য বোঝা হয়ে ঘাড়ে বসে থাকে তাদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য।

নিজের সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। ২০২০ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করবো। আমরা দেশকে দারিদ্রমুক্ত করবো। উন্নত সমৃদ্ধ করার জন্য অনেক কাজ করছি। আরও কাজ করবো। প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত যোগাযোগ করা যায় এজন্য সড়ক ভালো করছি এবং দ্রুত গতির ট্রেন লাইন নির্মাণ হচ্ছে।

বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এতিমের টাকা লুট করার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় কারাগারে আছেন। এটা কোনো রাজনৈতিক মামলা নয়। সরাসরি দুর্নীতির মামলা। আমরা কোনো রাজনৈতিক মামলা দেইনি। বরং খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আমার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দিয়েছিল। দুজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। কত নেতাকর্মী মারা গেছে তাদের সময়। ৬৩টি জেলায় একই দিনে বোমা হামলা হয়েছে।

এর আগে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।