প্রতারক রমজানকে ধরিয়ে দিয়ে ৩ হাজার পরিবারকে বাঁচান-সাংবাদিক সুলতান মাহমুদ

696

হেলেনা খাতুন ও ডালিয়া আক্তারঃ প্রতারক রমজানকে ধরিয়ে দিয়ে ৩ হাজার পরিবারকে বাঁচানোর জন্য ডিসি, এসপি ও মেয়রের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সাংবাদিক সুলতান মাহমুদ, সভাপতি জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন নারায়ঙ্নণগঞ্জ জেলা। প্রতারক প্রায় ৩ হাজার মানুষের ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং গাঁ ডাকা দিয়েছে ভুক্তভোগীদের। ভূক্তভোগী পরিবারগুলো অনেকেই অভিযোগ করে বলে, আমাদের কষ্টে অর্জিত টাকা হাতিয়ে নিয়ে বহু জায়গা সম্পত্তির মালিক হয়েছে এই রমজান প্রতারক। বর্তমানে সে গরীবের কোটি কোটি টাকা নিয়ে গাঁয়েব রয়েছে। আর আমরা ভূক্তভোগী পরিবারগুলোকে বিভিন্নভাবে ভাড়াটিয়ে সন্ত্রাসী দ্বারা ভয় ভীতি ও হুমকির হচ্ছি প্রতিদিন। তাহলে একজন প্রতারকের এতো সাহস হয় কি করে? কে তার সেল্টারদাতা ? এমন হাজারো প্রশ্ন এখন জনমনে।

নারায়ণগঞ্জ শহরের বৌ-বাজারে সম্মিলিত সঞ্চয় তহবিল নামে একটি সমিতির গ্রাহকদের কমপক্ষে দশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপন করেছে প্রতারক রমজান আলী। গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত দেবার কথা বললেও নানাভাবে তাদেরকে হয়রানি করে আসছে। গত দেড় মাস যাবত সমিতির মালিকের বাড়ি দফায় দফায় ঘেরাওসহ আন্দোলন বিক্ষোভ করেও রমজান আলীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আত্মগোপনে থেকেই সে বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেবার তারিখ দিলেও একইভাবে প্রতারণা করে আসছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।

সুত্রমতে, এ ব্যাপারে থানা পুলিশসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না। উপায়ান্তর না দেখে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা পাওনা টাকার দাবিতে ১৮ অক্টোবর রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে। তিন শতাধিক গ্রাহক এই মানববন্ধনে অংশ নেয়।

গ্রাহকরা জানায়, আর্থিক মুনাফা লাভের আশায় জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩ হাজার মানুষ নগদ অর্থ বিনিয়োগ করেছে এই সমিতিতে। মাসিক ভিত্তিক সঞ্চয়, দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় (ডিপিএস) ও দুই থেকে দশ বছর মেয়াদে (এফডিআর) মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ করে তারা। সর্বনিম্ন তিন লাখ থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ ও দশ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে কেউ কেউ, যাদের অধিকাংশই নারী। সারা জীবনের সঞ্চয় ও জমি বিক্রি করে বিনিয়োগ করেছে তারা। তবে কোন ধরনের লাইসেন্স বা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘ আঠারো বছর যাবত অবৈধভাবে সমিতি পরিচালনা করেছে প্রতারক রমজান আলী।
গ্রাহকদের এই বিপুল অংকের টাকা অন্যত্র বিনিয়োগ করে সে বেশ কয়েকটি বাড়ি, জমি ও বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। তবে গ্রাহকরা টাকা ফেরত চাইলে নানাভাবে গড়িমসি করতে থাকে প্রতারক রমজান

গ্রাহকদের অভিযোগ, চলতি বছরের মার্চ মাসে মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে লকডাউনের সময় থেকেই সমিতির সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে গা ঢাকা দেয় প্রতারক রমজান আলী। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও নিয়মিত বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় চরম হতাশায় জীবন যাপন করছে গ্রাহকরা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে গ্রাহকদের সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র বিভা হাসান ও সামাজিক সংগঠন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি মো. নুরুদ্দিন। এ ব্যাপারে তারা সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন ভুক্তভোগী গ্রাহকদের।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র বিভা হাসান বলেন, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের পাশে তিনি আছেন এবং থাকবেন। তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন জনপ্রতিনিধি প্যানাল মেয়র বিভা হাসান।

পরবর্তিতে শুক্রবার ৩০শে অক্টোবর বিকাল ৩টায় নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডস্থ বৌ-বাজার এলাকায় ভূক্তভোগী হাজার হাজার পরিবারের আয়োজনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু বলেন, জনগণ আমাকে তাদের মূল্যবান ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন। সেই জনগনের মা বোনেরা আজ দিশেহারা, রমজানের প্রতারণার শিকার। জনগনের স্বার্থ্যে আমি সব সময় কাজ করি। প্রতারক রমজানের সুবিচার আমি এই জনগনকে সাথে নিয়েই করবো,
আব্দুল করিম বাবু আরো বলেন, দুঃস্থ,গরীব ও অসহায় পরিবার গুলোর মাঝে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাই আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই। আজকে এখানে হাজারো মা বোন এবং দুঃস্থ গরীবরা সমবেত হয়েছেন, কারন রমজান নামের এক প্রতারক আপনাদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। রমজান প্রতারকের আত্মসাতের টাকা আদায়ের সার্থ্যে আজ আমি এখানে এসেছি। আমি গত প্রায় ১ মাস যাবৎ শুনছি এই রমজান প্রতারক প্রায় ৩ হাজার মানুষের ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং গাঁ ডাকা দিয়েছে। কিন্তু এখনো তার পরিবার এই এলাকায় বসবাস করছে। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলতে চাই মানুষ এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। ৫ বছরের হিসাব কাউকে দেয়া হয়নি প্রতারক রমজানের পক্ষ হতে। কেহ প্রতিবন্ধি, কেহ ভিক্ষা করে, কেউ টেইলারি করে কষ্টে অর্জিত টাকা জমিয়েছে এই রমজান প্রতারকের কাছে। সেই টাকা দিয়ে অনেকে মেয়ের বিয়ে দিতেন, কেউ তার ছেলে-মেয়ের শিক্ষার কাজে ব্যবহুত করতেন, কেউ সুচিকিৎসার জন্য টাকা জমিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতারক রমজানের হাত থেকে কেউই রক্ষা পেলেন না। তাছাড়া আমি শুনেছি অনেক বিচারক মহল ও জনপ্রতিনিধির কাছে গিয়েও এখন পর্যন্ত কোন লাভ হয়নি ভূক্তভোগী পরিবারগুলোর। তাই আমি এই এলাকার জনগনের স্বার্থ্যে আমার পক্ষ হতে যা পদক্ষেপ নিতে হয়, আমি তা নিবো ইনশাল্লাহ।

মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় দাবী জানায়, অতিবিলম্বে এই প্রতারক রমজানকে আইনের আয়তায় এনে ভূক্তভোগী হাজারো পরিবারের কষ্টের টাকা উদ্ধার করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব-১১সহ সকল আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে ভুক্তভোগিরা।