করিডর গেট দিয়ে অবাধে আনা হচ্ছে ভারতীয় রোগাক্রান্ত গরুর মাংস

203

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের জনসাধারণের চলাচলের একমাত্র সড়ক ভারতীয় তিনবিঘা করিডর গেট দিয়ে অবাধে আনা হচ্ছে  ভারতীয় রোগাক্রান্ত গরুর মাংস। অধিকাংশ রোগাক্রান্ত, অসুস্থ গরুর মাংস এনে পাটগ্রাম উপজেলা সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার  হাট-বাজারে বিক্রি করায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুর রহমান জানান, ‘উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা করে অবৈধ ভাবে ভারতীয় গরুর মাংস নিয়ে আসা বন্ধ করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বিজিপি’র সঠিক নজর দারীর অভাবে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না । বিজিবি ও জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধও করা হয়েছে। কিন্তু কোন ভাবেই তা মানা হছে না। এতে জনস্বাস্থ্য পড়েছে  হুমকির মুখে। এ নিয়ে জেলা পর্যায়ে কথা বলে বিজিবিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, ভারতের ভেতরে দহগ্রাম ইউনিয়নের অবস্থান হওয়ায় উভয় দেশের চোরাকারবারীরা সীমান্তের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে ভারতীয় গরু, মহিষ ও অন্যান্য পণ্য পারাপার করে থাকে। অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় রোগাক্রান্ত ও অসুস্থ্য হরিয়ানা, বোল্ডার (এক ধরণের বড়ো গরু), রাতের আঁধারে দহগ্রামে এনে কোনো প্রকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই অন্ধকারে জবাই করা হয়। এজন্য গরু প্রতি ২ হাজার আবার কিছু ক্ষেত্রে ২হাজার ৫শত করে টাকা দিতে হয় বিজিপির লাইনম্যানকে। এসব গরুর শত শত মণ (এক মণ ৪০ কেজি) মাংস বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডের দিকে পাচার করে বিক্রি করে আসছে দির্ঘদিন ধরে। এতে জনস্বাস্থ্যে মারাত্নক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। একাধিক মাংস বিক্রেতার দাবি কতিপয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন ব্যক্তি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নিদ্দিষ্ট হারে টাকা দিয়ে গরুর মাংস পারাপার করা হয়।

একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘বিভিন্ন অটো ভ্যান গাড়িতে ৫-৭ মণ করে গরুর মাংস করিডর গেট দিয়ে পার করতে গাড়ি প্রতি স্থানীয় বিজিবি’র লাইনম্যানকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। গেটের দুই দিকের দুই ক্যাম্পের লাইনম্যানকে টাকা না দিলে কোনোক্রমেই মাংস গেট দিয়ে পারাপার করতে দেয় না তল্লাশী চৌকিতে দায়িত্বরত বিজিবি’র সদস্যরা।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে দহগ্রাম যাতায়াতের তিনবিঘা করিডর সড়ক দিয়ে এর আগে কখনোই এভাবে গরুর মাংস পারাপার হয়নি। গত প্রায় দুইমাস থেকে ব্যাপক হারে গরুর মাংস পারাপার হচ্ছে।

পাটগ্রাম উপজেলার নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) শায়লা পারভীন বলেন, ‘দহগ্রামের মানুষ কোনোকিছুই মানে না। টাকার লোভে লোভী হয়ে গেছে। সুস্থ্য গরু ও নিরাপদ মাংস বিক্রির বিষয়ে আমরা সভা-সমাবেশ, মাইকিং করেছি। জনপ্রতিনিধিদেরকে বলা হয়েছে। তারপরও কাজ হচ্ছে না-এখন মামলা দিতে হবে। মাংস আনতে নিষেধ করলেও কেউ কথা শুনে না।’

পাটগ্রাম পৌর ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও পাটগ্রাম কসাই গরুর বাজার থেকে মাংস ক্রেতা আমিনুর রহমান (৪৫) বলেন, ‘বাজার জুড়ে দহগ্রাম থেকে আনা ভারতীয় গরুর মাংস। মাংস গুলো ভালো না। এর আগে নিয়েছি, রান্না করে খেতেও ভালো লাগেনা। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না তা জানিনা।’

পাটগ্রাম পৌর গরুর মাংস বিক্রেতা বাবু মিয়া (৩৬) বলেন, ‘দহগ্রাম ও পানবাড়ি গ্রামের কসাইরা (মাংস বিক্রেতারা) বিভিন্ন জনকে ম্যানেজ করে দহগ্রামের করিডর গেট দিয়ে মাংস নিয়ে আসে। এনে পানবাড়ি বিজিবি বাজারে রাখে। পরবর্তীতে পাটগ্রামের সব কসাইরা ওইখান থেকে কিনে এনে পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে। এতে দাম কম হওয়ায় পাটগ্রাম উপজেলায় আর দেশি গরু জবাই হয়না।’

দহগ্রাম তিনবিঘা করিডর গেট সন্নিকট পানবাড়ি গ্রামের মাংস বিক্রেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি জানান, ‘গাড়ি গাড়ি মাংস আনা হত। এখন কম। ভারতীয় বিএসএফ থাকে এজন্য বিভিন্ন কৌশলে গাড়ির বক্সে, ব্যাটারি রাখার  স্থানে মাংস আনা হয়। প্রকাশ্যে বা গোপনে আনলেও লাইনম্যানকে টাকা দিতে হয়।’

দহগ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘কিছু গরু জবাই হয় , তবে রাতের আধারে গরু যেন জবাই না হয় তার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি । আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর যেন জবাই করা হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া য়াবে ।