ব্যবহার করা ইটের সুরকি, পুরনো রড ব্যবহার করে  ভবন নির্মাণ

169

সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ নিন্মমানের রড, বালু সিমেন্ট, অন্য ভবনে ব্যবহার করা ইটের সুরকি, পুরনো রড ব্যবহার করে এ ভবন নির্মাণ করছে রফিকুল ইসলাম নান্নু।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে চারতলা কলেজ ভবন নির্মাণ করেছে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর বিরুদ্ধে। সোনারগাঁয়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁ জি.আর.ইনষ্টিটিউশন মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ভবন নির্মাণের অভিযোগ তুলেন এলাকাবাসী, শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ।
শুধু জি. আর. ইনষ্টিটিউশনের ভবনই নয় যুবলীগের সভাপতির প্রভাবে সকল ঠিকাদারি কাজে সে অনিয়ম করে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার এ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীকে অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারে অশালীন আচরণ করেছে। ফলে কেউ তার কাজের বিষয়ে কোন প্রতিবাদ করে না। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নের ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনারগাঁয়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁ জি.আর.ইনষ্টিটিউশন মডেল স্কুল এন্ড কলেজের চার তলা বিশিষ্ট ভবনের ঠিকাদারি কাজ পায় সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু। এ ভবনের নির্মাণ কাজ ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সে মাত্র ৪৫% কাজও শেষ করতে সক্ষম হয়নি।  এ ভবন নির্মাণের শুরু থেকেই নিন্মমানের রড, সিমেন্ট, বালু ও সুরকি ব্যবহার করেছে। শুধু তাই নয়,  এ ভবন নির্মাণে অন্যকোন পুরাতন ভবনে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা ইটের সুরকি ও রড ব্যবহার করেছে। সেই সুরকি ও রড এখনো ঐ স্কুল মাঠে পড়ে আছে।
সরেজমিনের ঐ স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল মাঠের দক্ষিন দিকে একটি তিনতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মানাধীন।ওই ভবনের পাশেরই নিন্মমানের ইট, সুরকি, অন্যস্থানে ব্যবহার করা পুরাতন ইটের সুরকি, পুরাতন রড ও বালু মিশ্রিত সিলেকশন বালু ফেলে রাখা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এ ভবন নির্মাণের জন্য সে স্কুলের বাথরুমের ট্রাংকি ও সীমানা প্রচীর ভেঙ্গেছে। ফলে গত দুই বছর স্কুলে একই বাথরুম ব্যবহার করতে হচ্ছে শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন সকলেই। বাথরুমের ট্রাংকি গভীরভাবে গর্ত করার কারনে ওই স্কুলের মডেল ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। একাধিকবার এ ট্রাংকি মেরামত করার জন্য বলা হলেও কোন কর্ণপাত করেনি। এ নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ, জেলা প্রশাসক, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ গন্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে নাশিল করলেও কোন লাভ হয়নি।

সোনারগাঁ জি.আর.ইনষ্টিটিউশন মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সুলতান মিয়া বলেন, এ ভবন নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এখানে নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করেছেন। তাকে বাধা দিলে সে কাজ বন্ধ রাখে। স্কুল ছুটির পর থেকে রাতের আধারে সে এ কাজ করে থাকে। তাকে তেমন কিছু বলাও যায় না। দীর্ঘদিন ধরে এর নির্মাণ কাজ চলছে। ফলে সীমনা প্রাচীর ভাঙ্গা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের ফলে পাশ্ববর্তী মডেল ভবনেও ফাঁটল দেখা দিয়েছে। মডেল ভবনের ট্র্যাঙ্কিও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। একটি বাথরুমই শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যবহার করছে।

সোনারগাঁ জি.আর.ইনষ্টিটিউশন মডেল স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোতালেব মিয়া স্বপন বলেন, আমাদের সম্পদ আমাদের রক্ষা করতে হবে। এ ভবনে যে পরিমাণ নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এতে করে ভবনটিও ৩০ বছর মনে হয় টিকবে না। প্রতিবাদ করে আমাদের সম্পদ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ এলাহী বলেন, ভবন নির্মাণে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়ে থাকলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে। তাছাড়া কাজও বন্ধ রাখা হবে। কোনভাবেই নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আরিফুল হক নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের সত্যতা ম্বীকার করে বলেন, নিন্মমানের সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পুনরায় নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে থাকলে তা ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে কাজ করতে হবে। কেউ প্রকৌশলীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে সেটা তার ব্যক্তিত্বের পরিচয়।

অভিযুক্ত ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম নান্নু বলে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর ন্মিমানের সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখানে আমার আরেকটি সাইডের কাজের সামগ্রী রাখা আছে। সেগুলো দিয়ে সাইডের কাজ করা হচ্ছে। আমি এ ভবনে শতভাগ কাজ দেওয়া চেষ্টা করছি।

সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা গোপন রাখার শর্তে জানান, যুবলীগের সভাপতি নান্নু পদের ক্ষমতায় আরো অনেক কাজে প্রতারণা করেছে যা সোনারগাঁবাসী অবগত আছে। আমরা দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।