চট্টগ্রামের পটিয়ায় হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী গ্রেফতার

150

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

নিহত ভিকটিম কামাল উদ্দিন (৪৫) চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানাধীন ছনহরা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং পেশায় একজন রাজমিস্ত্রির সহকারী। গত ১২ জুলাই ২০১৫ ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ০৯০০ ঘটিকায় নিহত ভিকটিম এর প্রতিবেশী শিশুরা ভিকটিমের বাড়ীর পাশের পুকুরে গোসল করতে থাকে এবং পুকুরের পাড়ে উঠে আবার পুকুরে লাফালাফি করতে থাকে। তখন নিহত ভিকটিম এর তালতো বোন ফাতেমা আক্তার দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বিধায় শিশুদেরকে পুকুরের পাড় হতে লাফালাফি না করার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু অবুঝ শিশুরা তার অনুরোধ না শুনে আরো বেশী হৈউল্লাস করে পুকুরে লাফালাফি করতে থাকে। তখন ফাতেমা আক্তার পুকুরে একটি ঢিল ছুড়ে মারলে শিশু আল আমিন এর গায়ে লাগে। পরর্বতীতে শিশু আল আমিন বাড়িতে গিয়ে ঢিল ছোড়ার বিষয়টি তার মাকে জানালে আল আমিনের মা উত্তেজিত হয়ে ভিকটিমের তালতো বোনকে চুল ধরে টানাটানি করে মারধর করে। উক্ত ঘটনার জের ধরে বেলা আনুমানিক ১৩৪৫ ঘটিকার সময় শিশু আল আমিনের আত্মীয়স্বজনরা পরস্পর যোগসাজশে ভিকটিম মোঃ কামাল উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। উক্ত চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনাটি সে সময় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

উক্ত ঘটনায় নিহত ভিকটিম এর ভাতিজা জোবাইর হোসেন প্রকাশ যুবরাজ বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানায় ১১ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং- ১৪(০৭)২০১৫, জিআর- ২৫৩/১৫, ধারা- ১৪৩/৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। মামলা দায়েরের পর হতে বর্ণিত হত্যাকান্ডের প্রধান তিন আসামী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। আসামীরা দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত পুলিশের রিপোর্ট এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আসামীদের অনুপস্থিতিতে ভিকটিম কামাল উদ্দিন (৪৫)’কে হত্যার দায়ে আসামীদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।

র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামালার প্রধান তিন আসামী চট্টগ্রাম মহানগরীর কর্ণফুলী থানাধীন কর্ণফুলী নদীতে একটি জাহাজে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ২৫ জুন ২০২৩ ইং তারিখে বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। আসামী মোঃ জামাল (৩৫), ২। মোঃ কামাল হোসেন (৩২) এবং ৩। মোঃ আব্দুস ছবুর (৪০), পিতা- মৃতঃ মোহাম্মদ ইসলাম, সাং- দক্ষিণ চাটরা মৌলভী পাড়া, থানা- পটিয়া, জেলা- চট্টগ্রামদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে।

পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, তারা ভিকটিম কামাল উদ্দিন (৪৫)’কে নির্মম ও নৃশংসভাবে ছুরি ও লোহার রড এবং লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে হত্যা পর আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনাম ধারণ করে দীর্ঘ ০৭ বছর যাবৎ নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।