ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার মধ্যেই সম্পন্ন চিকনদন্ডীর উপ-নির্বাচন

47

ওসমান গনি,হাটহাজারী, চট্টগ্রামঃ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, গোলাগুলি আর ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডী ইউনিয়নের উপ-নির্বাচন।

রোববার ২৮ এপ্রিল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৩টি কেন্দ্রে শান্তি পুর্ণভাবে ভোট গ্রহন শুরু হলেও বেলা ১২টার দিকে ৮নং ওয়ার্ডের খন্দকিয়া ছমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে রজনীগন্ধা প্রতীকের প্রার্থী নেজাম উদ্দিন তনি ও দুটিপাতা প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আফছার সরকারের সমর্থকদের মাঝে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর এক পর্যায়ে আইন শৃখলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই শুরু হয় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। গোলাগুলি আর দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরনের ঘটনা। ভাংচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও পাল্টা আক্রমনে যায়- ছোড়ে রাবার বুলেট, লাঠি চার্জ করে ছত্র-ভঙ্গ করে দেয় উভয় পক্ষের সমর্থকদের। দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কেন্দ্রের পুরো এলাকায়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে। উভয় পক্ষের মাঝে অবস্থান করে পুলিশ ফাঁকাগুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কেন্দ্র দখলে রাখে আইন শৃখলা বাহিনী। উভয়পক্ষ কেন্দ্র দখলে চেষ্ঠা করলেও আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপের কারনে তা সম্ভব হয়নি। পুলিশের পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে বিজিবি ও র‍্যাব। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় দুপুরের পর থেকে ভোটারের তেমন উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে এঘটনায় কারো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরপরই উভয় প্রার্থী কেন্দ্রের মাঠে উপস্থিত হয়ে ঘটনার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে। বাইরে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও কেন্দ্রের ভেতরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যদিও বাইরের ঘটনার কারণে ভোটারের উপস্থিতি হ্রাস পায় বলে জানায়,  প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ এমদাদুল হক।

অপরদিকে ৭নং ওয়ার্ডের চিকনদন্ডী কাটাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাহিরে সকাল সাড়ে দশটার দিকে রজনীগন্ধার সমর্থকরা চশমা প্রতীকের জহুরুল আলমের সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া, ১১টার দিকে আতঙ্ক সৃষ্টিতে ককটেল বিস্ফোরণ ও পৌনে ২টার দিকে আবারো জড়ো হয়ে নির্বাচনের শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করার চেস্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠলেও আইন শৃংখলা বাহিনীর ভূমিকায় তা ভেস্তে গেছে। প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ একরাম উদ্দীন জানায়,  যা হয়েছে কেন্দ্রের বাইরে। কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইন শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতি এবং কঠোর পদক্ষেপে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে থাকায় সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া খন্দকিয়াছমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এলাকায় দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে ১২ ও ১৩নং ছালামত আলী খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুন ও পুরাতন ভবন কেন্দ্রের বাইরে ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে সেখানেও কেন্দ্রের ভেতর পরিস্থিতি ঠিকছিল বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার মোঃ ইকবাল হোসাইন ও রোজিনা রহমান।

এদিকে সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা গেছে,  নারী পুরুষ ভোটাররা সানন্দে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে। ভোট প্রদানে কোন বাধা কিংবা অমুক প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে বলে জোর প্রয়োগ করার ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটা কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত পুলিশ,  আনসার ভিডিপি উপস্থিত ছিল। একই সাথে বিজিবি,  র‍্যাব ও পুলিশের টহল ছিল দেখার মত। যেকোন পরিস্থিতির খবর পেলেই ছুটে যাচ্ছে তারা। তাছাড়া নির্বাহী অফিসারসহ সার্বক্ষণিক মাঠে ছিলে ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

এদিকে বিকাল চারটার পর প্রতিটা কেন্দ্রের ভোট গণনার পর জানা গেছে,  দুটিপাতা প্রতীকের সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা মোঃ নুরুল আফছার সরকার ৩৭৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রজনীগন্ধা প্রতীকের তরুণ ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন তনি পেয়েছে ৩৬০৮ ভোট। ৩০৬১ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে শমা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ জহুরুল আলম। এদিকে বিজয়ী ঘোষণার পর পরই আনন্দ মিছিল বের করে তার কর্মী সমর্থকরা। নানান ষড়যন্ত্রকে ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিয়ে চিকনদন্ডীবাসীর সেবার সুযোগ করে দেয়ায় ভোটার, কর্মী সমর্থক এবং দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বিজয়ী প্রার্থী নুরুল আফছার।