অসহায় গরীব ভুমিহীন পরিবারের সন্তান ১০০ টাকায় চাকুরী পেয়েছে

474

নুরুজ্জামান সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জ জেলায় অসহায় গরীব ভুমিহীন পরিবারের সন্তান ১০০ টাকার বিনিময়ে যোগ্যতার বিনিময়ে চাকুরী পেয়ে অনেক খুশী। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সুনামগঞ্জ জেলা থেকে নারী-পুরুষসহ সাধারন কোটা, মিুক্তিযোদ্ধা কোটা, পুলিশ পোষ্য কোটা, আনসার ও ভিডিপি কোটা, এতিম কোটা, উপজাতীয় কোটায় মিলিয়ে ২৫৫ জনকে ১০০ শত টাকায় পুলিশে নিয়োগ দিয়েছেন পুলিশ সুপার সুনামগঞ্জ মোঃ বরকতুল্লাহ্ খান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা পুলিশ লাইন মাঠে ফলাফল ঘোষণার পর পুলিশ সদস্যপদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা তাদের মনের অনুভুতিগুলো সবার সামনে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে অভিব্যক্ত প্রকাশ করেন। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গণিগঞ্জ বাজারের বাঁশি রাম রবি দাসের ছেলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ স্বপন রবি দাস এভাবে তার অনুভুতির প্রকাশ করে, আমি মুচির সন্তান আমার বাবা গণিগঞ্জ বাজারে ৫ টাকা দিয়ে মানুষের জুতা সেলাই করে আমাকে পড়ালেখা করিয়েছে। এত দারিদ্রের মধ্যে আমার স্বপ্ন ছিলো আমি যেন দেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি। যখন বাবাকে বলতাম আমি পুলিশে চাকরি করব, বাবা বলতেন পুলিশের চাকরি পেতে ৬-৭ লাখ টাকা লাগে এতো টাকা আমি কোথায় পাব। বাজারে জুতা সেলাই করে যে টাকা রোজগার হয় তা দিয়েত সংসার চলে না বাপ, আমি তোকে এতো টাকা দেব কৈ থেকে, মুচির সন্তান তুই কি পুলিশ হতে পারবি। যখন একশো টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হল আমি একশত টাকার ব্যাংক ড্রাফট দিয়ে চাকরির দরখাস্ত দিয়ে আজ চাকরি পেলাম এজন্য আমিও আমার পরিবার সরকারের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।
তাহিরপুর উপজেলার চিকসা গ্রামের ভুমিহীন পরিবারের মেয়ে আছমিনা আক্তার বলে, আমি ভুমিহীন পরিবারের সন্তান। বাবা নেই, কাকা আমাদের প্রতিপালন করেছেন। আমরা ৫ বোন ২ ভাই ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। পুলিশ যখন মাইকিং করে একশত টাকার বিনিময়ে পুলিশের চাকরি পাওয়া যাবে, একথার উপর বিশ্বাস রেখে আমি চাকুরিতে আবেদন করি। আজ চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করে পুলিশে চাকরি পেয়েছি, তাই আমিও আমার পরিবার সরকারের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের সার্টিং মারাকের মেয়ে ঝিনুক মারাক বলেন, তারা ২ ভাই ১ বোন। বাবা কৃষিকাজ করে কোন রকমে সংসার চালান। টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার কোন সামর্থ্য পরিবারের নেই। একশত টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি পেয়ে আমি ও আমার পরিবার অনেক খুশি।
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের মধুয়ারচর গ্রামের শাহীন আহমদ বলে, আগে জানতাম পুলিশের চাকরি পেতে লাখ লাখ টাকা লাগে। এখানে একশ টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়ে আমি অনেকটা হতবাক।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের অমৃতশ্রী গ্রামের কৃষক বীরেন্দ্র দাসের মেয়ে অর্পিতা দাস বলে, সে স্বপ্নেও ভাবেনি একশ টাকা দিয়ে পুলিশের চাকরি মিলবে। কিন্তু বাস্তবে একশ টাকা দিয়ে পুলিশের চাকরি পেয়েছি।তাই সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি।

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোঃ বরকতুল্লাহ খানের সভাপতিত্বে ও সুনামগঞ্জের পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান মিজানের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ নিয়োগ কমিটির সদস্য হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ সারোয়ার ও হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবু শৈলেন, সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আজাদ ও মামুন চিশতিসহ নিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধিগণ।

এবছর পুলিশ সদস্য পদে মোট ১৬২২ জন আগ্রহী প্রার্থী প্রাথমিক পর্বে অংশ নিয়ে বাছাই পর্বে ১ হাজার ৬০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৫৫ জন নারী পুরুষকে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। পুরুষ সাধারণ কোঠায় ১২৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় ৭২ জন, সাধারন কোঠায় নারী ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় ৭ জন, পুলিশ পোষ্য কোঠায় ৩ জন, উপজাতি কোঠায় ২ জন ও আনসার কোঠায় ৩ জন পরীক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিায়ার সংবাদকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সুনামগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কুলেন্দু শেখর দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক মুক্তকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম শ্যামল, রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি সাংবাদিক লতিফুর রহমান রাজু, মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সুনামগঞ্জ জেলা আহবায়ক ও দৈনিক সোনালী খবরের জেলা প্রতিনিধি মোঃ ফরিদ মিয়া, মাছরাঙা টিভি ও দৈনিক জনকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি এমরানুল হক চৌধুরী, মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি শাহজাহান চৌধুরী, বর্তমান সময়ের সম্পাদক ও প্রকাশক ও দৈনিক আমার বার্তা জেলা প্রতিনিধি মোঃ আফজাল হোসেন, ২৪ ঘন্টা টিভির জেলা প্রতিনিধি কে এম শহীদুল, দৈনিক হাওরাঞ্চলের কথা স্টাফ রিপোর্টার মিজানুর রহমান রুমান ও হৃদয় হোসেন, সাংবাদিক আল হেলালসহ আরও অনেক মিডিয়া কর্মী।