কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করলেই সরকারের সাথে থাকবে বলে জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম-আল্লামা শাহ আহমদ শফী

405

স্টাফ রিপোর্টারঃ কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করলেই সরকারের সাথে থাকবেন, নয়তো থাকবেননা বলে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর ও আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

(১লা ফেরুয়ারী) শনিবার জামতলায় বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে এক ইসলামী মহাসম্মেলনে একথা জানান শফী। আহমদীয়া মুসলিম জামাত তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবিতে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা এই ইসলামী মহা সম্মেলনের আয়োজন করে।

আহমদ শফী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মহাসম্মেলনে বলেন, ‘আমি আগেও মানুষ দ্বারা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি যে, কাদিয়ানীদের সরকারি ভাবে অমুসলমান ঘোষণা করো। এখােনও সরকারি মানুষ আছে আপনারা গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলুন অতি দ্রুত কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করতে।

সত্যই তুমি (প্রধানমন্ত্রী) যদি মুসলমান হও তবে কাদিয়ানীকে অতি দ্রুত কাফের ঘোষণা করো। নয়তো এই দেশে কি হবে জানি না। প্রধানমন্ত্রী আপনি জিজ্ঞাসা করুন মানুষের কি অবস্থা। কাদিয়ানীদের অমুসলমান ঘোষণা করতে ১৬ কোটি মুসলমান সবাই একমত। এটা করলে তবে আমরা আপনার সাথে থাকবো নইলে আমরা থাকবো না। নয়তো থাকবো না। থাকবো না। তোমার মানুষ দ্বারা তোমাকে বার বার জানানো হয়েছে, তুমি কর্ণপাত করতেছ না। যদি কর্ণপাত করো তাহলে অতি দ্রুত কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করো। এরা (কাদিয়ানী) এদেশে থাকতে পারবে কিন্তু হিন্দু হইয়া এবং বৌদ্ধ হইয়া। মুসলমান হইয়া থাকতে পারবে না।’

কাদিয়ানীদের সাথে কোন ধরণের আত্মীয়তা করা যাবে না এমন ফতোয়া দিয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, ‘আমাদের নবীর পর কোন নবী আসবে না। আমাদের নবী মোহাম্মদ (সা.) কে যারা নবী মানবে না, শেষ নবী মানবে না তারা কাফের। কাফের। কাফের। আমাদের নবী আল্লাহর শেষ নবী। যারা নবী মুহাম্মদ (সা.) কে শেষ নবী মানেনা তাঁদেরকে মুসলমানের কবরে দাফন করা যাবে না। কাদিয়ানীদেরকে মুসলমানের কবরে দাফন করা যাবেনা। তাঁদের সাথে আত্মীয়তা করা যাবেনা। তাঁদের মহিলাদের বিয়ে করা যাবেনা।’

মহাসম্মেলনেক ঘিরে যোহরের নামাজের আগে থেকেই মহাসম্মেলনে বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রসার বিভিন্ন আলেম, ওলামা, ছাত্র-শিক্ষক, বিএনপি-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, হেফাজতের নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে লাখো মানুষের মিলনস্থলে পরিণত হয়। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তবে মহাসমাবেশে উপস্থিত সকলেই ছিলেন সুশৃঙ্খল। সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর ছিলেন, একই সাথে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী সদস্য থাকায় মহাসমাবেশ সুশৃঙ্খলভাবেই সমাপ্ত হয়েছে।

হঠাৎ ভেঙে পড়ে মঞ্চ :

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের পশ্চিম দিকে এই ইসলামী মহাসম্মেলনের প্যান্ডেল করা হয়। যোহরের আগে থেকে ঈদগাহ মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সময় যত গড়িয়েছে মঞ্চের মধ্যে অতিথির সংখ্যাও বেড়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মহাসমাবেশের প্রধান অতিথি আল্লামা আল্লামা শাহ আহমদ শফী মঞ্চে উঠেন।

তিনি আসার পর থেকে অতিথিদের সাথে আরো বুজুর্গ নেতারাও মঞ্চে উঠেন। বিকেল পৌঁনে পাঁচটার দিকে হঠাৎ মঞ্চ ভেঙে পড়ে। মঞ্চের পেছনে থাকা এলইডি স্ক্রিনটি হঠাৎ ভেঙে পড়ে যায়। তবে এটি যেখানে আছড়ে পড়েছে সেখানে থাকা মানুষরা দ্রুত সরে যাওয়ায় কেউ গুরুতর আহত হয়নি। এসময় আল্লামা শফিসহ অতিথিরা মঞ্চেই ছিলেন। তবে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মঞ্চ। মঞ্চটি নিচের দিকে বসে পড়ে।

ওই সময় মঞ্চে থাকা ও এরআশেপাশের লোকজনের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এলইডি স্ক্রিনের ভাঙাচোরা অংশে দূরের কয়েকজন সামান্য আহত হলেও কেউই গুরুতর আহত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন। পরে ভাঙা মঞ্চেই আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জকে শাপলা চত্ত্বরে পরিণত করার হুঁশিয়ারি বিএনপি নেতা খোরশেদের :

আগামী তিন মাসের মধ্যে সরকার কাদিয়ানিদের যদি অমুসলিম ঘোষণা না করে তবে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ডাকা সমাবেশে যে ধরণের ঘটনা ঘটেছে প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জকে শাপলা চত্ত্বরে পরিণত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মহানগর যুব দলের সভাপতি ও নাসিক ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোরশেদ।

ইসলামিক মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়ে খোরশেদ বলেন, সরকারের কাছে এমপিত্ব, মন্ত্রীত্ব কিংবা খাওয়া-পড়া চাইনা আমরা, নবীর ইজ্জত রক্ষা করতে চাই। সেটি করতে আমরা রাজপথে তাজা রক্ত ঢেলে দেবো। তিনমাসের মধ্যে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা না করলে প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জকে শাপলা চত্ত্বরে পরিণত করা হবে। কাদিয়ানীরা এদেশে নাগরিক সুবিধা  নিয়ে বসবাস করুক তবে তাদের অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। আর কাদিয়ানীদের উপাসনালয়গুলোও বন্ধ করতে হবে।

কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানিয়েছে শ্রমিক লীগ নেতা পলাশ : কাদিয়ানীরা যে দাবিগুলো করছে  একজন মুসলিম হিসেবে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব না। মুসলমান পরিচয়ে এরা অমুসলিমের মত যেসব কাজ করছে সেগুলো মানা যায়না আর তাই অচিরেই কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি মহাসম্মেলনে জানিয়েছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন মুসলমান। দুনিয়ার স্বার্থে অনেক বক্তব্য ও মিছিল অতীতে করেছি তবে আজকের এই মিছিল ও স্লোগানের জন্য আল্লাহর নবী সাফায়াত করবেন বলে আশা রাখি। এরআগে পাগলা থেকে অনেক লোকজন নিয়ে মহাসমাবেশস্থলে আসেন পলাশ।

কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করতে কোন বাধা নেই :

মহাসম্মিলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব জুনায়েদ বাবু নগরী বলেন, কাদিয়ানীরা এই আকিদাকে মানেনা। তাঁরা আমাদের নবীকে শেষ নবী মানেনা। কাদিয়ানীরা আমাদের নবীর সাথে  বেয়াদবী করেছে সুতরাং তারা কাফের। তাই সরকারের কাছে আমদের এবং সকলের দাবি সরকার যেনো এই কাফের কাদিয়ানীদের অবিলম্বে সাংবিধানিক ভাবে কাফের ঘোষণা করে।

কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করতে কোন বাধা নেই। বিশ্বের প্রায় ১০৫টির বেশি ইসলামী সংগঠন কাদীয়ানীদের রাষ্ট্রয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করেছে। তাই আমি বলবো কাদিয়ানীদরে সরকারি ভাবে কাফের ঘোষণা করার আন্দোলন শুরু হলে সেই আন্দোলনে জীবন দিয়ে হলেও রক্ত দিয়ে হলেও মানুষ শরীক হবেন।

কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে খতমে নবুওয়াতের বিশ্বাস অস্বীকার, নবুওয়াত দাবি, নবীগণের সাথে বেয়াদবি ও অশালীন বক্তব্য, মুসলমানদের কাফির বলা ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা ইত্যাদি সহ নানা অভিযোগ উত্থাপন করে আসছে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ। এরই প্রেক্ষিতে এই ইসলামী মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হয়।

এই মহাসম্মেলনকে ঘিরে (৩১ জানুয়ারি) শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টায়  হেলিকপ্টারে চড়ে নারায়ণগঞ্জে আসেন আহমদ শফী।  মহাসম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিরেন ভারতের দেওবন্দ দারুল উলুমের সদরুল মুদাররিসীন আল্লামা কমর উদ্দিন হাফীজাহুল্লাহ।

আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জের সভাপতি আবদুল কাদিরের সভাপতিত্বে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ছাড়াও মহাসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামীর মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরের সভাপতি নূর হোসাইন কাশেমী, বাংলাদেশ মজলিসে দাওয়াতুল হক’র আমীর আনোয়ার শাহ, বিবাড়ীয় জামিয়া দারুল আরকামের মুহতামিম সাইদুর রহমান, মধুপুওে পীর সাহেব আব্দুল হামীদ, ঢাকার কামরাঙ্গীচর জামিয়া নুরিয়ার মুহতামিম আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী, দেওনা’র পীর সাহেব মিজানুর রহমান চৌধুরী, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদী, বাহাদুরপুর পীর সাহেব আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, ঢাকার মুফাসসিরে কুরআন জুনায়েদ আল হাবীব, জাতীয় সিরাত কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ইমাদুদ্দীন, নারায়ণগঞ্জের  সাইনবোর্ড জামিয়া আশরাফিয়ার মুহতামিম মুফতী আবদুল বারী, মাদানীনগর মাদ্রসার মহতামিম ফয়জুল্লাহ সন্দিপী, ঢাকার মালিবাগ জামি’আ শারইয়্যাহ মুহতামিম আশরাফ আলী, বাংলাদেশ বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব আবদুল কুদ্দুস, হবিগঞ্জের মুফাসসিরে কুরআন তাফাজ্জুল হক, নূরুল ইসলাম ওলিপুরী,  সাবেক ধর্মমন্ত্রী মুফতি মুহাম্মাদ ওয়াক্কাস, উজানীর পীরসাহেব আশেকে এলাহী, ফুরফুরা শরীফের পীর সাহেব আব্দুল হাই মেশকাত, খেলাফতে মজলিসের আমীর মুহাম্মদ ইসহাক, ঢঅকা জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়ার শায়খুল হাদিস মামুনুল হক, ঢাকার কাকরাইলের মাওলানা নজরুল ইসলাম কাশেমী, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মাওলানা ওবায়দুর রহমান খাঁন নদভী, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুল হক কাশেমী, সাইনবোর্ডের জামিআতু ইবরাহীমের মুহতামিম শফিকুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ ওলামা পরিষদেও সভাপতি আবদুল আউয়াল, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জের সেক্রেটারি আবু তাহের জিহাদী, শ্রমিক লীগ নেতা কাউসার আহম্মেদ পলাশ, মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।